মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “আমরা টিআরএফ (দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট)-কে (TRF) অবৈধ বলে মনে করি না। প্রমাণ দিন যে তারা পহেলগাঁয়ে হামলা চালিয়েছে। টিআরএফ যে ওই কাজে যুক্ত, তার প্রমাণ দেখান। আমরা এই অভিযোগ মেনে নেব না।” সম্প্রতি নির্লজ্জভাবে কথাগুলি বলেছেন পাকিস্তানের (Pakistan) বিদেশমন্ত্রী ইসহাক দার। টিআরএফ লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন। গত ২২ এপ্রিল দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হামলা চালিয়ে টিআরএফ বেছে বেছে ২৬ জন হিন্দু পর্যটককে খুন করেছে বলে অভিযোগ। ১৮ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টিআরএফকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বিদেশি জঙ্গি সংগঠন এবং বিশেষভাবে মনোনীত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আমেরিকার এই ‘দাওয়াই’ ইসলামাবাদের সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতার কূটনৈতিক ও কৌশলগত একটি বড় ধাক্কা।
কী কবুল করলেন দার (Pakistan)
বর্তমানে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পাকিস্তান। এই অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয় দু’বছরের জন্য। এদিন দার কবুল করেন, “পাকিস্তান রাষ্ট্রসংঘের সদস্য হিসেবে পহেলগাঁওয়ে হামলার নিন্দা জানানোয় নিরাপত্তা পরিষদের জারি করা বিবৃতিতে টিআরএফের নাম মুছে ফেলতে হস্তক্ষেপ করেছিল।” তিনি বলেন, “আমরা রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে টিআরএফের নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করেছি। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন রাজধানী থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান তা কখনওই মেনে নেবে না।” তিনি বলেন, “টিআরএফের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে এবং পাকিস্তান জিতেছে।”
হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বিবৃতি টিআরএফের
প্রসঙ্গত, পহেলগাঁওয়ে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে টিআরএফ নিজেই। ভারত এবং আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও আলাদা আলাদাভাবে লস্কর-ই-তৈবার পরিকাঠামোর সঙ্গে টিআরএফের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে। তার পরেও দার (Pakistan) নির্লজ্জভাবে দাবি করেন, “আমরা টিআরএফকে অবৈধ বলে মনে করি না। প্রমাণ দিন যে তারা পহেলগাঁওয়ে হামলা চালিয়েছে। টিআরএফ যে ওই কাজে যুক্ত, তার প্রমাণ দেখান। আমরা এই অভিযোগ মেনে নেব না।” উল্লেখ্য যে, এই মন্তব্যগুলি শুধু পাকিস্তানের (Pakistan) সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে দ্বিচারিতা প্রকাশ করে না, বরং এটি বিশ্বব্যাপী দীর্ঘদিনের উদ্বেগকে ফের নিশ্চিত করে যে, পাকিস্তান এমন একটি দেশ যে রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে (TRF)।
আমেরিকার প্রতিক্রিয়া
দারের মন্তব্যের পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশের তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও টিআরএফকে একটি স্বীকৃত বিদেশি জঙ্গি সংগঠন (FTO) এবং বৈশ্বিক সন্ত্রাসে জড়িত বিশেষভাবে মনোনীত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ঘোষণা করেন। ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “টিআরএফ, যা লস্কর-ই-তৈবার একটি ফ্রন্ট ও প্রতিনিধি গোষ্ঠী, ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত হামলার দায় স্বীকার করেছে, যেখানে ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হন।” তারা আরও জানিয়েছে যে, টিআরএফ নামের এই গোষ্ঠী গত এক বছরে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডকে ২০০৮ সালের পর ভারতে নিরীহ মানুষের ওপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে উল্লেখ করে রুবিও বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ রক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ট্রাম্প সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল ভারত
ট্রাম্প সরকারের এই পদক্ষেপকে পাকিস্তানের (Pakistan) জঙ্গি মদতদাতাদের বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, “লস্কর-ই-তৈবার (LeT) সহযোগী টিআরএফকে বিদেশি জঙ্গি সংগঠন এবং বিশেষভাবে মনোনীত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণার জন্য সেক্রেটারি রুবিও এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এই সংগঠনই ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে হামলার দায় স্বীকার করেছে। সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স।” আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, দারের এহেন মন্তব্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসবাদীদের রক্ষায় ইসলামাবাদের কূটনৈতিক ছলচাতুরির মুখোশ খুলে দিয়েছে (TRF)। তারা নিজেরাই নিজেদের ভিকটিম হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডে আমেরিকা ভারতের পাশে থাকায় পাকিস্তানের দ্বিচারিতা এখন বৈশ্বিক পর্যায়ে নজিরবিহীন পর্যবেক্ষণের মুখোমুখি বলেই ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।
কী বলল চিন
এদিকে, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য মূলত চিনের আপত্তিতেই নিরাপত্তা পরিষদের তরফে জারি করা বিবৃতি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় টিআরএফ এবং লস্করের মতো শব্দগুলি। এর পরেই পাকিস্তান আশা করেছিল, টিআরএফ ইস্যুতেও আমেরিকার অবস্থানের পরে পাকিস্তানের (Pakistan) পাশে থাকবে শি জিনপিংয়ের দেশ। তবে শুক্রবারই চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান সাফ জানিয়ে দেন, “চিন দৃঢ়ভাবে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে এবং ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করে।”
Leave a Reply