মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ‘‘ভারতীয় সভ্যতার মূল্যবোধই পারে বিশ্বের সংকটগুলির মোকাবিলা করতে।’’ এমনটাই মত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) সর সংঘচালক মোহন ভাগবতের। মঙ্গলবার আরএসএস প্রধান (Mohan Bhagwat) বলেন, ‘‘সারা বিশ্বে যে সংকটের পর্বত দেখা দিয়েছে— তা সে বৈষম্য হোক, পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা কিংবা জাতিগত সংঘর্ষ—এই সমস্ত কিছুই সমাধান সম্ভব একমাত্র ভারতীয় মূল্যবোধের দ্বারা।’’ এটাই একমাত্র পবিত্রতম বিকল্প বলে উল্লেখ করেন মোহন ভাগবত
আধুনিক ইতিহাস তৈরি করা হয়েছে পশ্চিমী ন্যারেটিভকে মেনে
প্রসঙ্গত, মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat) উপস্থিত ছিলেন একটি অনুষ্ঠানে যার নাম ছিল ‘দশম অনুব্রত ন্যাস নিধি’। এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিল যৌথভাবে ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি এবং অখিল ভারতীয় অনুব্রত মঞ্চ। মোহন ভাগবত বলেন, ‘‘আধুনিক ইতিহাস যা সম্পূর্ণভাবে তৈরি করা হয়েছে পশ্চিমী ন্যারেটিভকে মেনে এবং সেভাবেই গঠন করা হয়েছে—সেখানে আশ্চর্যজনকভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে ভারতের অবদানকে। আজকে বিশ্বজুড়ে যে বইগুলি প্রচলিত রয়েছে, সেখানে চিন এবং জাপানের সভ্যতা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই ঠাঁই পেয়েছে, কিন্তু সেখানে আশ্চর্যজনকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে ভারতকে।’’
বিশ্বমঞ্চে ভারতকে বাদ দেওয়া হয়েছে
বিশ্বের প্রসঙ্গের পাশাপাশি, মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat) নিজের বক্তব্যে টেনে আনেন ভারতের প্রসঙ্গ। তিনি জানান, বিশ্বমঞ্চে ভারতকে তো বাদ দেওয়া হয়েছে, আবার ভারতের অভ্যন্তরেও শিশুরা যখন ইতিহাস পড়ছে, তখন তাদের দেখানো হয়েছে যে ভারত মানে শুধুমাত্র মুঘল যুগ। বর্তমানে, মোদি সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল বদল এনেছে এবং সেখানে ভারতীয় রাজাদের অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের ইতিহাসও পড়ানো হচ্ছে। ‘কাটছাঁট’ করা হয়েছে মুঘল যুগকে, কিছু ক্ষেত্রে তা বাদও দেওয়া হয়েছে। মোহন ভাগবতের বক্তব্যে মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসাও দেখা গিয়েছে। বর্তমানে দেশের সংস্কৃতিকে পুনরুত্থিত করার যে প্রয়াস শুরু করেছে কেন্দ্র সরকার, তাকে তিনি স্বাগত জানান।
বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মেটাতে পারেনি বিশ্বের সমস্যা
মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat) আরও বলেন, ‘‘বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সারা বিশ্বজুড়ে দেখা গেলেও, মানব সভ্যতার যে মূল সমস্যা—তাকে চিহ্নিত করে তা দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে এই অগ্রগতি। তিনি বলেন, “বিজ্ঞান আজ বিস্তৃত হয়েছে, মানবীয় জ্ঞান থেকে ক্রোমোজোম এবং জিন—সমস্ত কিছু তারা স্পর্শ করেছে, চাঁদ, মঙ্গল গ্রহ, সব জায়গায় পৌঁছেছে। কিন্তু তারপরেও দেখা যাচ্ছে, গরিব ও ধনীর মধ্যে এক বিশাল ফারাক তৈরি হয়েছে এবং তা ক্রমাগত চওড়া হচ্ছে। যাঁরা বিত্তশালী, তাঁরা আজ সৎভাবে স্বীকার করছেন যে তাঁরা ভিতরে অসুখী।’’ অর্থাৎ মোহন ভাগবতের বক্তব্য অনুযায়ী প্রযুক্তি বা বিজ্ঞান সমাধান দিতে পারেনি এই অসুখের।
সাম্যবাদ ও পুঁজিবাদ নিয়ে কী বললেন তিনি
তিনি আরও বলেন, ‘‘বিশ্বের সমস্ত সভ্যতাই পরখ করেছে রাজতন্ত্র, অঞ্চলভেদে আলাদা আলাদা সরকার, পুঁজিবাদ (ক্যাপিটালিজম), সাম্যবাদ (কমিউনিজম)।’’ এরপর তিনি বলেন, “এই সমস্ত মতাদর্শ উঠে এসেছে একটি অসম্পূর্ণ দর্শন থেকে এবং তারা গোটা বিশ্বকে একপাক্ষিক চোখে দেখেছে। কিন্তু এদের সঙ্গে যদি তুলনা করা হয় ভারতীয় সভ্যতার, তাহলে দেখা যাবে—এখানে সম্প্রীতি আছে, আত্মনির্ভরতা আছে।”
সমগ্র সৃষ্টির কল্যাণে কাজ করে ভারতীয় মূল্যবোধ
মোহন ভাগবত বলেন, “ভারতের ঐতিহ্য হল সকলকে এই শিক্ষা দেওয়া যে আমরা যা করব, সেটা যেন সমগ্র সৃষ্টির কল্যাণে লাগে।” তিনি আরও বলেন, “ধর্ম ছাড়া ধন-সম্পদ এবং কোনও কিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, শেষ পর্যন্ত অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।” তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘আদিবাসী সম্প্রদায়—যাঁরা ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকে বসবাস করছেন—তাঁরা প্রকৃতির মধ্যেই বেঁচে থাকেন এবং আধুনিক প্রবণতা ও সভ্যতাকে সমালোচনা করেন।’’ তাঁর মতে, “আজ আমরা অনেক কিছুই করি সংবাদমাধ্যম বা ইন্টারনেটে যা পাই সেই অনুসারে। আমরা আমাদের চিন্তাভাবনার উপরে অন্যের প্রভাব তৈরি করেছি।” তিনি বলেন, “পরিবর্তন আনতে হবে ব্যক্তির মধ্যে, পরিবারের মধ্যে।”
আগে জাগতে হবে ভারতকে
মোহন ভাগবত বলেন, “ভারত কখনও এটা মনে করে না যে ভারতীয় মডেলকে তারা অন্য সভ্যতার উপর চাপিয়ে দেবে। বরং আমরা আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত এবং প্রভাবিত—সেই পথে থেকেই আমরা বিশ্বের কাছে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।” তিনি বলেন, “ছোট কিন্তু সচেতন পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা সমাজকে বদলাতে চাই, বদলাতে চাই বিশ্বসভ্যতাকেও। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান বিশ্বের যে কোনও সমস্যা—সম্পদ নিয়ে সংঘর্ষ হোক বা সংস্কৃতি নিয়ে সংঘাত—তার সমাধান রয়েছে ভারতীয় সভ্যতার মূল্যবোধে।’’ তাঁর নিজের ভাষায়, “প্রথমে ভারতকে জাগতে হবে। সেটা সম্ভব হলেই, বিশ্বের সমস্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।”
Leave a Reply