Putin Modi Meet: বৃহস্পতিবার ভারতে আসছেন পুতিন, মোদির সঙ্গে কী কী বিষয়ে হবে আলোচনা?

Putin modi meet annual summit

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে (Annual Summit) যোগ দিতে ভারতে আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Putin Modi Meet)। আগামী ৪-৫ তারিখ ভারতে কাটাবেন তিনি। এই সময়ের মধ্যেই পুতিন বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। সাক্ষাৎ করবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গেও। উল্লেখ্য, এটি গত চার বছরে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির প্রথম ভারত সফর। বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্টের এই সফর দুই দেশের নেতাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা, ভবিষ্যৎ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ করে দেবে।

বিদেশমন্ত্রকের বক্তব্য (Putin Modi Meet)

বিদেশমন্ত্রকের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আসন্ন রাষ্ট্রীয় সফরটি ভারত ও রাশিয়ার নেতৃত্বকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির পর্যালোচনা করার, ‘বিশেষ এবং সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্ব’কে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্য নির্ধারণ করার এবং পারস্পরিক স্বার্থসম্পন্ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়গুলিতে মতবিনিময় করার সুযোগ করে দেবে।” ক্রেমলিনের তরফেও বলা হয়েছে, আলোচনার বিস্তৃত পরিসর রয়েছে, যেখানে রাজনীতি, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও বৈশ্বিক বিষয়-সহ বহু ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সরকারি একটি নোটে ক্রেমলিন জানিয়েছে, “এই সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের ব্যাপক অ্যাজেন্ডা বিশেষাধিকারপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারত্বের আওতায় সর্বাঙ্গীনভাবে আলোচনা করার সুযোগ দেবে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়েও বিবেচনা করা হবে।”

প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি সহযোগিতা

সূত্রের খবর, শীর্ষ সম্মেলনে (Annual Summit) ভারত ও রাশিয়া মূলত প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবে। ভারত আরও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে চায়। কারণ ‘অপারেশন সিঁদুরে’র সময় এগুলি খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তিনটি ইউনিট এসে গিয়েছে। আরও দুটি আসার কথা আগামী বছরে। কেন সরবরাহে দেরি হচ্ছে রাশিয়ার কাছে তা জানতে চাইবে ভারত। প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং নয়াদিল্লিতে আয়োজিত ন্যাশনাল সিকিউরিটি সামিটে বলেন, “এস-৪০০ সংক্রান্ত আলোচনা হলেও এই বৈঠকে এ সম্পর্কে কোনও ঘোষণা আশা করবেন না। এই বৈঠক দুপক্ষের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বৃহত্তর দিকগুলিতে কেন্দ্রীভূত থাকবে।” শুধু তা-ই নয়, ভারত অন্যান্য প্রকল্পে দেরির বিষয়টিও উত্থাপন করবে, যার মধ্যে রয়েছে সুখোই আপগ্রেড। রাশিয়ার সু–৫৭ যুদ্ধবিমানের প্রতি সম্ভাব্য আগ্রহ নিয়েও আলোচনা করবে দুই দেশ। এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জেরে ভারত রাশিয়া থেকে কম তেল কিনছে। তাই রাশিয়া ভারতকে অপরিশোধিত তেলের ওপর অতিরিক্ত ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে (Putin Modi Meet)।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইতি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইতি টানা এবং শান্তি প্রচেষ্টা নিয়েও আলোচনা হবে দুই রাষ্ট্রনেতার। ভারত দীর্ঘদিন ধরেই এই সংঘাতের দ্রুত অবসানের আহ্বান জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বলেছেন যুদ্ধের মাঝে শান্তি প্রচেষ্টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি লিখেছেন, “এই সংঘাতের দ্রুত অবসান এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি।” প্রসঙ্গত, এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ঘনিষ্ঠ অংশীদার, এবং ভারত শান্তিকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি এই সম্পর্ককে ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে চায়। পুতিন-মোদির আলোচনার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে বাণিজ্য। ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মূল কারণ হল, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল কিনছে। তবে রাশিয়ার প্রধান তেল কোম্পানির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে দিতে পারে এই আমদানি (Annual Summit)।

বাণিজ্য বৃদ্ধিতে প্রভাব

ভবিষ্যতে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ভারত ও রাশিয়া উভয় দেশই ভারতের রফতানি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করবে, বিশেষ করে ওষুধ শিল্প, যন্ত্রপাতি এবং কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে। বৈঠকে অসামরিক বিমান চলাচল, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ, বিনিয়োগ প্রকল্প এবং শ্রমিকদের যাতায়াতের বিষয়গুলিও আলোচনায় থাকবে (Putin Modi Meet)। আলোচনায় উঠে আসবে ভারত-রাশিয়া অংশীদারিত্ব পুনরুজ্জীবনের কথাও। পুতিনের এই সফরটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পশ্চিমী দেশগুলির চাপের কারণে ভারত কিছুদিন ধরে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে অপেক্ষাকৃত নীরব ও সীমিত রেখেছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে দুই দেশের সম্পর্ক আবারও শক্তিশালী হতে শুরু করেছে, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে। ভারত প্যান্টসার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ভরোনেজথ রাডার-সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়েছে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, এই সফর উভয়পক্ষকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক এবং সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বিষয়ে রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের বিস্তৃত অ্যাজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ

ভারত ও রাশিয়ার এই আলোচনার নেপথ্যে একটি বড় কারণ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ। ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করেছে এবং ভারতকে রাশিয়া থেকে কম তেল কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে (Putin Modi Meet)। আমেরিকার নয়া আইন অনুযায়ী, রাশিয়ার জ্বালানি খাতের সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলির জন্য আরও কঠোর শাস্তি আরোপ হতে পারে। এই সব বিষয়ই ভারতকে এই সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বাধ্য করেছে। কারণ ভারত চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া – দুই দেশের সঙ্গেই শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রাখতে। এজন্য অবশ্য দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে রাজি নয় নরেন্দ্র মোদির ভারত (Annual Summit)।

ভারতে আসছেন পুতিন

সাত বছর আগে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতিতে সই হয়েছিল এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের ঐতিহাসিক চুক্তি। শুক্রবার সেখানেই ফের বৈঠক করতে চলেছেন এই দুই রাষ্ট্র প্রধান। সরকারি সূত্রের খবর, সেখানে অন্তত ৫৬ হাজার কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সমঝোতা সংক্রান্ত মউ স্বাক্ষরিত হতে পারে।২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরুর পরে এই প্রথমবার ভারতে আসছেন পুতিন। প্রতিরক্ষার পাশাপাশি তাঁর এই সফরে নির্মাণক্ষেত্র, বয়নশিল্প, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্র নিয়ে নতুন পথে হাঁটার সূচনা করতে পারে ভারত ও রাশিয়া। রাশিয়ার ওই ক্ষেত্রগুলিতে ভারতীয় পেশাদারদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিও ঘোষণা করতে পারেন পুতিন (Putin Modi Meet)।

পোল্যান্ডের ডেপুটি বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য

এদিকে, পুতিনের ভারত সফর নিয়ে যখন নয়াদিল্লিতে চলছে চূড়ান্ত ব্যস্ততা, তখন ভারতে এসেছেন পোল্যান্ডের ডেপুটি বিদেশমন্ত্রী ওয়াদিস্লাও তোফিল বার্তোজুক্সি। সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি খুব আশাবাদী এই ভেবে যে উনি (পুতিন) যখন দিল্লিতে আসবেন, তখন প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বলবেন। আমি আগেই বলেছি, ছ-সাত মাস আগেই যখন আমি এখানে ছিলাম, তখন প্রধানমন্ত্রী মোদি, চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পুতিনকে ইউক্রেনে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে না বলেছিলেন। তাঁরা দুজনেই সঠিক কাজটিই করেছেন। তাই আমি আশা করি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুতিনকে বলবেন, দেখুন (Annual Summit) প্রেসিডেন্ট, আপনার ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করা উচিত। কারণ এই সংঘর্ষ থেকে আমাদের, আপনার বা অন্য কারও কোনও লাভ নেই। কারণ এটি ভারতকেও প্রভাবিত করে। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার দুটি বড় কোম্পানি থেকে তেল কেনা নিষিদ্ধ করেছেন। রাশিয়া থেকে ভারতের একটি বিশাল সরবরাহ রয়েছে, যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে (Putin Modi Meet)।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share