Supreme Court: সিঙ্গুর ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে চরম ভর্ৎসিত রাজ্য সরকার, মামলা শুনবে হাইকোর্ট

Supreme Court on Singur Tata Case

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সিঙ্গুর ইস্যুতে রাজ্যের আর্জি খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। একই সঙ্গে সালিশি আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে রাজ্যের অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখল দেশের শীর্ষ আদালত। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, সিঙ্গুরে কারখানা না হওয়ার জন্য টাটা মোটরসকে ৭৬৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া সংক্রান্ত যে বিষয়টি রয়েছে, তা কলকাতা হাই কোর্টেই শুনবে। চলতি মাসেই, আগামী ১২ অগাস্ট বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের বেঞ্চে, সিঙ্গুর সংক্রান্ত এই মামলার শুনানি রয়েছে।

২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয় সালিশি আদালত

এক্ষেত্রে উল্লেখ করা দরকার, সিঙ্গুরে টাটা মোটরসের কারখানা না হওয়ার জন্য ৩ সদস্যের একটি সালিশি আদালত টাটা গোষ্ঠীকে ৭৬৫ কোটি ৭৮ লাখ — অর্থাৎ প্রায় ৭৬৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল। ৩ সদস্যের এই আদালত ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর ওই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সালিশি আদালতের সেই নির্দেশ সামনে আসতেই ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে একটি বিবৃতি দিয়েছিল টাটা গোষ্ঠী। সেই বিবৃতিতে তারা বলেছিল, “২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর তিন সদস্যের সালিশি আদালতে সিঙ্গুরে অটোমোবাইল কারখানা মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। সর্বসম্মত ভাবে ট্রাইব্যুনাল, টাটা মোটরসকে ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা দিতে বলেছে। সেই সঙ্গে, ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুরো ক্ষতিপূরণ পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে বলা হয়েছে।”

পর্যবেক্ষণে কী জানিয়েছিল হাইকোর্ট?

পরবর্তীকালে এই রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার এবং সেই মামলা দায়ের করার অনুমতিও দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বক্তব্য ছিল, সালিশি আদালতের সভাপতি তথা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ভিএস শ্রীপুরকর আসলে টাটা মোটরসের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। রাজ্যের আরও দাবি ছিল, সালিশি আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া আসলে পক্ষপাতদুষ্ট। তাই এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে। কিন্তু গত ১৯ জুন, হাইকোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায় রাজ্যের এই আবেদন খারিজ করে দেন (Singur Tata Case)। হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে জানায়, সালিশি আদালতের সভাপতির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলছে রাজ্য সরকার, আসলে তার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। এরপরে হাইকোর্টের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার।

কী জানাল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)?

শুক্রবারে শীর্ষ আদালতের (Supreme Court) এই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি অতুল এস চান্দুরকরের বেঞ্চে। এক্ষেত্রে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাই বহাল রাখল শীর্ষ আদালত। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের দায়ের করা মামলা খারিজও করে দেন তারা। সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার জানিয়েছে, ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত এই মামলার শুনানি কলকাতা হাইকোর্টেই হবে।

২০০৬ সালে টাটাকে জমি দেয় রাজ্য সরকার

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে হুগলির সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ি কারখানা প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেক্ষেত্রে টাটাকে এক হাজার একর জমি দেওয়া হয় (Singur Tata Case)। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা করতে পারেনি টাটা। এর পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ওই জমি টাটার কাছে ফেরত চায় তারা। টাটা গোষ্ঠী জমি ফেরাতে রাজি হয়। জমির দামের সঙ্গে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছিল টাটা, তাও যোগ করা হয়। কিন্তু টাটার এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি মমতা সরকার। তারপরেই লড়াই শুরু হয় আদালতে।

২০২৩ সালে আর্বিট্রেটর নিয়োগ করে শীর্ষ আদালত (Supreme Court)

২০২৩ সালে, ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড ও টাটা মোটরসের মধ্যে মামলায় সমস্যা মেটাতে আর্বিট্রেটর নিয়োগ করে সুপ্রিম কোর্ট। এই সালিশি আদালতের সভাপতির বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ তোলে রাজ্য। পরে হাইকোর্টে আপিল করে। সুপ্রিম কোর্টে শুক্রবার রাজ্যের তরফ থেকে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। অন্যদিকে টাটার তরফ থেকে আদালতে সওয়াল করতে দেখা যায় আইনজীবী মুকুল রোহতগিকে।

সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) সওয়াল-জবাব

কপিল সিব্বল জানান যে, আর্বিট্রেটরের এক বিচারপতি পক্ষপাতদুষ্ট। তাঁকে নাকি টাটাদের অনুষ্ঠানেও দেখা গিয়েছে। তীব্র আপত্তি জানান মুকুল রোহতগি। তিনি বলেন, একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে কিভাবে এই ধরনের অভিযোগ করা যায়? এর পাশাপাশি, শীর্ষ আদালতে তিনি আবেদন জানান যে এই মামলা খারিজ করে রাজ্যকে জরিমানা করা হোক। রাজ্যকে বড় জরিমানা করার দাবি ও করেন তিনি। এরপরই শীর্ষ আদালত নিজেদের পর্যবেক্ষণে জানায়, যদি কোনও ভাবে বোঝা যায় যে এই দাবি অনায্য, তবে রাজ্যকে বড় জরিমানা করা হবে। মুকুল রোহতগি বলেন, সবকিছুর সীমা থাকা উচিত। রাজ্যকে বড় জরিমানা হোক। এরপরেই রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। অর্থাৎ ক্ষতিপূরণ বাবদ টাটাদের হাতে তুলে দিতেই হবে ৭৬৬ কোটি টাকা।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share