মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সাভারকরের গান ‘সাগর প্রাণ তলমলে’র ১১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে শ্রী বিজয়া পূরমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে (Veer Savarkar) এক মহীরুহ ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat)। তাঁর মতে, সাভারকরের অসাধারণ প্রতিভা, স্পষ্ট চিন্তাধারা ও দেশের প্রতি গভীর নিষ্ঠার প্রতিফলনই এই কথাগুলি। সাভারকরের স্মৃতিচারণ উপলক্ষে আন্দামানে আয়োজিত এক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে আরএসএস প্রধান বলেন, “সাভারকরের ব্যক্তিত্ব ছিল সব অর্থেই পরিপূর্ণ। সঙ্গীত, কবিতা, নাটক, সাহিত্য রচনা ও জনসমক্ষে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা তাঁকে সমৃদ্ধ করেছিল। আর এই সব প্রতিভাই তিনি উৎসর্গ করেছিলেন ভারত মায়ের সেবায়।”
‘সাগরা প্রাণ তলমলালা’ (Mohan Bhagwat)
‘সাগরা প্রাণ তলমলালা’ সাভারকরের (Veer Savarkar) এক ঐতিহাসিক দেশাত্মবোধক কবিতা। এরই ১১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভাগবত বলেন, “সাভারকরের সাহিত্যকর্ম, বিশেষ করে তাঁর কবিতাগুলি, তাঁর ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতি তাঁর অটল অঙ্গীকার সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দান করে।” তিনি বলেন, “ভাষা, বিকাশ ও সাংস্কৃতিক চিন্তায় সাভারকরের অবদান তাঁকে এক বিশাল ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে, যাঁর ভাবনা আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।” সাভারকরের জীবনকে প্রভাবের দিক থেকে আকাশছোঁয়া বলে বর্ণনা করে ভাগবত জানান, তাঁর উত্তরাধিকার আজকের দিনে কখনও কখনও শোনা বিভাজনমূলক ভাষার সঙ্গে তীব্র বৈপরীত্য সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, “দেশকে খণ্ডিত করে এমন ভাষার কোনও স্থান নেই। সংকীর্ণ মানসিকতার (RSS) পরিচয় বা সংঘাতের আশ্রয় না নিয়ে ভারতকে একটি জাতি হিসেবে দেখতে হবে, এটিই ছিল সাভারকরের দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু (Mohan Bhagwat)।”
ভাগবতের বক্তব্য
ভাগবত বলেন, “সাভারকর জাতির একটি সুস্পষ্ট ধারণা উপস্থাপন করেছিলেন, যাকে তিনি অভিন্ন বংশপরম্পরা ও পবিত্র ভৌগোলিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটি সভ্যতামূলক ভাবনা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।” তিনি এও বলেন, “ঔপনিবেশিক শাসনকালেও এবং স্বাধীন ভারতের সময়েও সাভারকর বহু কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কখনওই সেই তিক্ততাকে দেশের প্রতি তাঁর অঙ্গীকারের ওপর প্রাধান্য দিতে দেননি।”
‘বীরগ্যালাক্সি’
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতীকদের মধ্যে সাভারকরকে (Veer Savarkar) স্থান দিয়ে সরসংঘচালক বলেন, “১৮৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী এক বিশাল ‘বীরগ্যালাক্সি’ গড়ে তুলেছিলেন, যার মধ্যে সাভারকর ছিলেন উজ্জ্বলতম নক্ষত্র।” তিনি বলেন, “আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে দুই মহীরুহ ব্যক্তিত্বের ছাপ আজও স্পষ্ট। এঁরা হলেন বীর সাভারকর এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এঁরা দুজনেই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এক গভীর ছাপ রেখে গিয়েছেন, যা কোনওদিন মুছে ফেলা যাবে না (Mohan Bhagwat)।”
‘সাগর প্রাণ তলমলে’র ১১৫তম বার্ষিকী
এদিকে, ওই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “হিন্দু সমাজের ভেতরে প্রচলিত নানা কুসংস্কার ও অনাচারের বিরুদ্ধে সাভারকর (Veer Savarkar) সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন এবং সমাজের বিরোধিতার মুখেও তিনি (RSS) নিজের কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।” তিনি বলেন, “অস্পৃশ্যতা দূর করতে সাভারকর এক ঐতিহাসিক সংগ্রাম করেছিলেন। হিন্দু সমাজের সমস্ত অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করেছেন। স্বাধীনতার আগে যাঁদের এখানে সেলুলার জেলে আনা হত, তাঁদের পরিবার কার্যত ভুলেই যেত।” তিনি বলেন, “এই কারাগার থেকে কেউ কখনও ফিরে আসবে, এমনটা কেউ ভাবতেন না। আজ এই স্থানটি ভারতবাসীর কাছে এক পবিত্র তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে, কারণ বীর সাভারকর তাঁর জীবনের কঠিন সময়টি এখানেই কাটিয়েছিলেন।” তিনি জানান, দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্য থেকেই এখানে এনে কাউকে না কাউকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
শাহি মন্তব্য
শাহ বলেন, “এই জায়গাটি সুভাষচন্দ্র বসুর স্মৃতির সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে। কারণ আজাদ হিন্দ ফৌজ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে মুক্ত করেছিল। বসুই এখানে দু’টি দ্বীপের নামকরণ করেছিলেন ‘শহিদ’ ও ‘স্বরাজ’। পরে একে সরকারি স্বীকৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।” সাভারকর সম্পর্কে শাহ বলেন, “তিনি জন্মগত দেশপ্রেমিক ও দূরদর্শী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজসংস্কারক, কবি ও লেখক। খুব কম লেখকই গদ্য ও পদ্য—উভয় ক্ষেত্রেই সমান দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। আমি তাঁর সাহিত্য পড়েছি, এবং আজও বলতে পারি না তিনি বেশি বড় কবি না লেখক, কারণ দু’টিতেই (RSS) তিনি ছিলেন অসাধারণ। পরবর্তী সময়ে তিনি একজন মহান ভাষাবিদ হয়ে ওঠেন। বহু নতুন শব্দ সৃষ্টি করে তিনি আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন। আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে বীর সাভারকর (Veer Savarkar) ৬০০-রও বেশি শব্দ উপহার দিয়েছেন।”

Leave a Reply