মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আইনি গেরোয় তৃণমূলের (TMC) সাংসদ ইউসূফ পাঠান (Yusuf Pathan)। প্রাক্তন এই ক্রিকেট তারকাকে ‘দখলদার’ তকমা দিল গুজরাট হাইকোর্ট। আদালতের সাফ কথা, বরোদা পুরসভার জমি বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছেন ইউসূফ। তাই ওই জমি তাঁকে খালি করে দিতে হবে। প্রয়োজনে পুরসভা বুলডোজার চালিয়ে ওই জমি খালি করাতে পারবে। তৃণমূলের আরও এক নেতা সন্দেশখালির শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধেও জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। মাথায় শাসক দলের আশীর্বাদী হাত থাকায় তিনিও গিলে ফেলেছেন বিঘের পর বিঘে জমি।
তৃণমূলের সাংসদ ইউসূফ (Yusuf Pathan)
গুজরাটের বাসিন্দা ইউসূফ। মুসলিম তাস খেলতে গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করে তৃণমূল। তার জেরে গোহারা হেরে যান ওই কেন্দ্রের দীর্ঘদিনের সাংসদ কংগ্রেসের অধীররঞ্জন চৌধুরী। তৃণমূলের এহেন নেতার গায়েই লাগল দখলদারের তকমা। গুজরাট আদালতের পর্যবেক্ষণ, “ইউসূফ একজন জনপ্রতিনিধি। তিনি সেলিব্রিটিও। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপের প্রভাব পড়ে সমাজের ওপর। তাই তাঁর আইন মেনে চলা উচিত। উল্টে তিনিই বেআইনি কাজ করছেন।” গুজরাট হাইকোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তৃণমূল সাংসদকে আর নোটিশ পাঠাবে না পুরসভা। এর পর জমি খালি না করলে পুরসভা প্রয়োজনে বুলডোজার চালাতে পারবে।
জমি দখলের অভিযোগ
বরোদা পুরসভার অধিকৃত ৯৭৮ স্কোয়ার মিটার জমি নিয়েছিলেন পাঠান। পুরসভার অভিযোগ, ওই জমিতে দেওয়াল তুলে জায়গাটি নিজের সম্পত্তির মতো ব্যবহার করছিলেন তৃণমূলের এই সাংসদ। কাজটি বেআইনি। উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালে পাঠানকে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন বরোদা পুরসভা কর্তৃপক্ষ। তাঁরা তাঁকে জমিটি কিনে নিতে বলেছিলেন। সেজন্য নিলাম করা হবে না। প্রতি বর্গমিটারে ৫৭ হাজার ২৭০ টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে পুরসভার ওই অনুমোদন বাতিল করে দেয় গুজরাট সরকার। পাঠান বেআইনিভাবে জমিটি দখল করে রেখেছেন, এই মর্মে তৎকালীন বিজেপি কাউন্সিলর বিজয় পাওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরেও এত বছর ধরে জমিটি ব্যবহার করে চলেছেন তৃণমূলের এই সাংসদ।
জমি দখলের অভিযোগ প্রমাণিত
আদালতে পাঠান (Yusuf Pathan) জানান, বর্তমান বাজারদরে তিনি জমিটি কিনে নিতে ইচ্ছুক (TMC)। এবার আপত্তি জানায় পুরসভা। তাদের দাবি, বিখ্যাত ক্রিকেটার সাংসদ হলেও, জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর জ্ঞান নেই। শুক্রবার সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানিতে পাঠানের দখল করা জমি পুররুদ্ধারের জন্য পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছেন গুজরাট হাইকোর্টের বিচারপতি মউনা ভট্ট। আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, “প্রাক্তন ক্রিকেটার যে ওই জমি দখল করে রেখেছেন, তা প্রমাণিত। তাই আইনত পুরসভা তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারে।”
আদালতের নির্দেশ
পুরসভার তরফেও জমি জবরদখলের জন্য পাঠানকে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল একাধিকবার। প্রতিবারই তাঁকে খালি করতে বলা হয় জমিটি। তার পরেও তিনি ছাড়েননি জমির দখলদারি। উল্টে পুরসভার নোটিশের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন পাঠান। আদালতের নির্দেশ, পাঠানকে আর কোনও নোটিশ পাঠানো হবে না। তিনি যদি নিজেই জমিটি খালি না করেন, তবে পুরসভা নিজে থেকেই ব্যবস্থা নেবে। অথচ জমিটি (Yusuf Pathan) পেতে কীই না করেছেন তৃণমূলের (TMC) এই সাংসদ। আস্তাবল করতে ওই প্লটটি কিনে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে তিনি আবেদন করেছিলেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। দাবির স্বপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, তিনি ও তাঁর ভাই ইরফান পাঠান দু’জনেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। তবে তার পরেও যে চিঁড়ে ভেজেনি, এদিন গুজরাট হাইকোর্টের রায়েই তা স্পষ্ট।
পশ্চিমবঙ্গের ছবি
গুজরাট থেকে এবার চোখ ফেরানো যাক খোদ তৃণমূল-শাসিত পশ্চিমবঙ্গে। এখানেও জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের আরও এক নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে, তিনিও মুসলিম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সন্দেশখালির শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তৃণমূল জমানায় তিনি ও তাঁর ভাই সিরাজউদ্দিন গায়ের জোরে ফসলের খেত দখল করে বদলে দিয়েছেন জমির চরিত্র। যে জমি এক সময় সবুজ সবজিতে ভরে উঠত, সেই জমির চরিত্র বদলেই বানানো হয়েছে মাছের ভেড়ি। শোনা যায়, ঘনিষ্ঠ (Yusuf Pathan) মহলে শাহজাহান প্রায়ই বলতেন ‘নোনা জলে সোনা ফলে’। সেই ‘সোনা’ ফলাতে গিয়েই তৃণমূলের (TMC) এই নেতা গায়ের জোরে দখল করে নিয়েছেন স্থানীয়দের জমি-জিরেত। রেশন কেলেঙ্কারিকাণ্ডের জেরে শাহজাহান গারদে যেতেই মুখ খুলতে শুরু করেন স্থানীয়দের অনেকেই। বেড়মজুর গ্রামের বাসিন্দা মৌসুমি হালদার সেই সময় বলেছিলেন, “আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। শ্বশুরমশাইকে মেরেছে। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এক বিঘে কৃষিজমি লিখিয়ে নিয়েছে। বাচ্চা দুটোর প্রাণের আশায় আমি কিছু বলিনি।”
পাঠানকাণ্ডের গুজরাট (Yusuf Pathan) হাইকোর্টের রায়ের পর অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, তৃণমূল (TMC) আর জবরদখল যেন সমার্থক!
Leave a Reply