মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মাত্র চার দিনের লড়াইয়ে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ দশা! পাকিস্তানের বায়ুসেনাঘাঁটিগুলিতে আগুন ঝরিয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। একের পর এক বায়ুসেনার ছাউনি গুঁড়িয়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে পাকিস্তান। নূর খানে হামলা আটকাতে ব্যর্থ হওয়ায় রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতরও যে মোটেই নিরাপদ নয়, তা স্পষ্ট বুঝে যান ইসলামাবাদের ফৌজি অফিসারেরা। তাই ভারতের সাম্প্রতিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সদর দফতর (Pakistan Army Headquarters) স্থানান্তরের কথা বিবেচনা করছে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ভারতের এই হামলা পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত হেনেছে।
কেন এই পরিবর্তন?
রাওয়ালপিন্ডির চকলালা এলাকায় অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টার (GHQ), যা যৌথ বাহিনীর সদর দফতরের নিকটবর্তী। এই ঘাঁটির পাশেই অবস্থিত নূর খান বিমানঘাঁটি, যা ভিআইপিদের আসা-যাওয়া ও সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার মার্শাল একে ভারতী নূর খান ঘাঁটির পূর্ব ও বর্তমান অবস্থার স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এই ঘাঁটি পাকিস্তানের সুরক্ষা ও নজরদারি ব্যবস্থার কেন্দ্র ছিল। পাকিস্তানের পাল্টা ভারতের হামলায় এই ঘাঁটির অবস্থা খুবই খারাপ। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ভারতের এই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে রেডার ফাঁকি দিয়ে ভারতের ড্রোনের নিচু উচ্চতায় ঢুকে পড়া, পাক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে পাশ কাটিয়ে হামলা করা পাকিস্তানকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
রাওয়ালপিন্ডিতে ভারতের ড্রোন হামলা
পাক বিমানবাহিনীর এই ঘাঁটিগুলির মধ্যে চকলালার নূর খান ছাউনিটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানী ইসলামাবাদ (Pakistan Army Headquarters) থেকে এর দূরত্ব মেরেকেটে ১০ কিলোমিটার। একে পাক বায়ুসেনার সদর দফতর বললে অত্যুক্তি করা হবে না। শুধু তা-ই নয়, অধিকাংশ বড় অপারেশনে মুখ্য ভূমিকা থাকে নূর খান ঘাঁটির। সংশ্লিষ্ট ছাউনিটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দফতর রাওয়ালপিন্ডির গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। গত ৮ মে তারিখে ড্রোন দিয়ে যেসব স্থানে হামলা চালানো হয়েছিল তার মধ্যে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশন (এসপিডি) এবং রাওয়ালপিন্ডিতে কাশ্মীর নিয়ে কাজ করা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর একটি জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স-নর্থ উইং, পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরে সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডারের বাসভবন, অ্যাটক জেলার ন্যাশনাল ডিফেন্স কমপ্লেক্স (এনডিসি), যা ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ট্রান্সপোর্টার-ইরেক্টার-লঞ্চার যান তৈরি করে। এই হামলা ইসলামাবাদে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, রাওয়ালপিন্ডিতে পাক সেনা সদর দফতরের কাছে নয়াদিল্লি আঘাত হানতেই সংঘর্ষবিরতিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন ইসলামাবাদের সেনাকর্তারা। এবার তারা ভাবছে কী করে সেনা সদর দফতর সরানো যায়।
পাকিস্তানের দুর্বলতা প্রকাশ
‘অপারেশন সিঁদুর’ আপাতত স্থগিত রেখেছে ভারত। কেউ কেউ একে সংঘর্ষবিরতি বলতেই পারেন, কিন্তু প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিশেষজ্ঞরা এই শব্দটি এড়িয়ে যাচ্ছেন। যুদ্ধের পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটাকে শুধু বিরতি বলে বর্ণনা করা যাবে না বরং বলা যায় এটি বিরল এবং কৌশলগত স্থগিতাদেশ। ভারত বারবার দাবি করেছিল, পাকিস্তানের পক্ষ থেকেই সংঘর্ষ বিরতির আবেদন করা হয়ছিল। ভারতের আঘাত সইতে পারেনি ইসলামাবাদ। এখন তাদের সেনা সদর দফতর সরানোর পরিকল্পনাই প্রমাণ করে ভারেতর দাবি সত্য। গত ৮ এবং ৯ মে রাতে ভারতের একাধিক বায়ুসেনাঘাঁটিকে নিশানা করে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী। এর পরই পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির আকাশসীমায় ঢুকে একের পর এক ছাউনিতে হামলা চালান ভারতের পাইলটেরা। ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে ইসলামাবাদ। বেশ কিছু গণমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে হামলার সময়কার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। সেখানে পাক বায়ুসেনাছাউনিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছে।
পাক সেনাবাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা কমছে
পাকিস্তানের ঘরের ভিতরে ঢুকে ভারতের এই হামলা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর (Pakistan Army Headquarters) জন্য বড় ধাক্কা। ফলে পাক সেনাবাহিনী এখন ঢেলে সাজানোর কথা ভাবছে ইসলামাবাদ। নেতৃত্ব পরিবর্তন, সদর দফতর স্থানান্তর তারই অঙ্গ। পাকিস্তান চাইছে তাদের সমরাস্ত্র এক জায়গায় না রেখে পাহাড়ঘেরা অঞ্চল যেমন বেলুচিস্তান বা খাইবার পাখতুনখোয়ায়র কোনও জায়গায় রাখতে। ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ১০ কিমি দূরে রাওয়ালপিন্ডি একটি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। যে কোনও সময় এখানে হামলা হতে পারে। তাই এখানে পরমাণু অস্ত্র রাখাও সুরক্ষিত নয়। ভারতের সঙ্গে সংঘাতের পর পাকিস্তান সেনার সদর দফতর সরানোর পরিকল্পনা ইসলামাবাদের দুর্বলতা স্পষ্ট করে। এই কাজ তাদের সামরিক ভাবমূর্তিতে বড় ধাক্কা দেবে, বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনা সদর দফতর স্থানান্তর একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। ঋণে ডুবে থাকা অর্থনীতির জন্য এটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ বালোচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহস জোগাবে এবং সাধারণ মানুষের সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা কমাবে।
Leave a Reply